নাজমুল হোসেন শান্তর অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা: দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পরই শেষ হচ্ছে নেতৃত্বের অধ্যায়?
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত/সংগৃহীত
বাংলার চোখ ডেস্ক
বাংলাদেশ ক্রিকেটে নেতৃত্বের আসনে আবারও বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। চলমান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষেই তিন ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিকেটভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ক্রিকবাজের বরাতে জানা গেছে, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তুষ্ট শান্ত নিজেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলীয় প্রত্যাশার চাপে ফর্মহীনতায় ভোগা শান্ত শেষমেশ নেতৃত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে চাইছেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিন ফরম্যাটের অধিনায়কত্বের ভার তুলে দিয়েছিল শান্তর কাঁধে। তরুণ ও প্রতিভাবান হিসেবে তাকে নেতৃত্বে আনা হলেও প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হন শান্ত। বরং অধিনায়কত্বের দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা হারান তিনি। বিসিবি পরিকল্পনা করেছিল, আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত শান্ত তিন ফরম্যাটে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই তার নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত দেশে-বিদেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ কী?
নাজমুল হোসেন শান্তর জন্য ২০২৪ সাল বেশ চ্যালেঞ্জিং গেছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তার ফর্ম নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নামার পর শান্তকে একাধিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিন ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেওয়া শান্তকে আরও বেশি সমালোচনার মুখে ফেলেছে। তার ওপর দলের প্রত্যাশার ভার বাড়িয়ে দেয় পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনাগুলো। যে কারণে চাপের মুখে পড়ে নিজের ফর্মও হারিয়ে ফেলেন তিনি। ব্যাট হাতে সেই আগের মতো অবদান রাখতে না পারায় এবং নিজের ফর্ম নিয়ে সংকটে থাকা শান্ত অবশেষে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বিসিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, "হ্যাঁ, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর তিনি নেতৃত্ব চালিয়ে যেতে চান না।"
শান্ত বলেন, “দেখা যাক কী হয়, কারণ আমি এখনো সভাপতির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছি।” বিসিবি বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও তিনি এ বিষয়ে অনড় রয়েছেন বলে জানা গেছে। শান্ত ইতিমধ্যেই টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব ছাড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন; এবার তিন ফরম্যাট থেকেই সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন।
সমালোচনার তীরে শান্ত
কঠিন সময়ে নেতৃত্বভার গ্রহণ করা শান্ত তার পারফরম্যান্সের কারণে বারবার সমালোচিত হয়েছেন। বিপর্যয়ের মুখে অধিনায়কত্বের চ্যালেঞ্জ সামলানোর পাশাপাশি নিজে পারফর্ম করতে না পারা শান্তর ওপর ব্যাপক মানসিক চাপ তৈরি করেছে। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার জন্য নিজেই কষ্ট পাচ্ছেন বলে জানান শান্ত। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষকরা তার পারফরম্যান্স এবং নেতৃত্ব নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়করা মনে করেন, তরুণ অধিনায়কের জন্য একসঙ্গে তিন ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেওয়া চাপের হয়ে দাঁড়ায়। তাই পারফরম্যান্সের উন্নতির জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াটা একেবারে ভুল নয়। এক সিনিয়র ক্রিকেটার বলেন, “শান্তর সময় এখনো আছে, কিন্তু ফর্মে ফিরে আসাটা জরুরি।
বিসিবির পরিকল্পনা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকল্প
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দেশের ক্রিকেটকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। বিসিবির পরিকল্পনা ছিল, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত শান্তর নেতৃত্বে দলকে পরিচালনা করা। তবে শান্তর সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে বোর্ডও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। আগামীতে কাকে নেতৃত্বে আনা হবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার পর সম্ভাব্য অধিনায়ক হিসেবে কয়েকটি নাম উঠে এসেছে। এর মধ্যে আছে সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, এবং মেহেদি হাসান মিরাজ। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অভিজ্ঞ এবং দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অধিনায়ক প্রয়োজন। এমনকি লিটন ও মিরাজের মতো খেলোয়াড়রা এ ব্যাপারে ভালো পারফর্ম করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। শান্তর বিদায়ের পর দলকে নতুনভাবে গড়ে তোলার কাজ হবে বোর্ডের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সভাপতি
শান্তর এই সিদ্ধান্তের পরেও বিসিবির সভাপতি এখনো দেশের বাইরে থাকায় সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তিনি দেশে ফিরলে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। দেশের ক্রিকেট বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে নেতৃত্ব ধরে রাখার পরামর্শ দিলেও শান্ত নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন। এমনকি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এই ফরম্যাটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন শান্ত। তবে বিসিবি সভাপতি দেশে ফেরার পরই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
নতুন নেতৃত্বে নতুন দিগন্তের স্বপ্ন
নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ দলের সামনে এক নতুন অধ্যায়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন স্থায়ী, প্রাজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ অধিনায়ক প্রয়োজন। আগামী দিনগুলোতে বিসিবি ও নির্বাচকরা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন এবং দলকে শক্তিশালী করে তোলার বিষয়ে কাজ করবেন।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন প্রজন্ম এখনো প্রতিশ্রুতিশীল এবং আগ্রহী। তবে দলকে স্থায়ীভাবে একটি মানসম্পন্ন দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নতুন অধিনায়ককে আরও পেশাদার ও পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে। শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের উন্নতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শেষ অধ্যায়?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় লিখতে চলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। নেতৃত্ব ছাড়ার পর কেমন পারফর্ম করেন এবং নতুন নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল কতটা এগিয়ে যেতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
0 Comments